আছি আমি ফেইসবুকে !

দুঃখিত! প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অনিয়মিত হয়ে যাবার জন্য। আলসেমীর কারণে ব্লগটা অনেকদিন থেকেই আপডেট করা হচ্ছেনা। স্ট্যাট থেকে জানতে পারছি অনেকেই এসে ঘুরে যাচ্ছেন। তাদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ফেসবুক পেজটায় মোটামুটি রেগুলার আমি। সেখানে লেটেস্ট আপডেট পাবেন ইনশাল্লাহ।

ব্ল্যানক ফিলিংস

ইদানিং খুব বেশি বেশি অনুভূত হচ্ছে বিষয়টা। বাংলায় শূন্যতা, ইংরেজীতে মনে হয় ব্ল্যানক ফিলিংস। সব কিছুই আছে তারপরও যেন কি নেই কি নেই একটা অনুভূতি। কেমন যেন একটা হাহাকার, কেমন যেন একটা আক্ষেপ!

সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে অনেক কিছু। বেকার রনি চাকুরী পেয়েছে, তার অফুরন্ত সময় ডাকাতি হয়ে গেছে, অক্ষমতার অনুভূতি বঞ্চনার অনুভূতি দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে, আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুন, সমানুপাতিক হারে বেড়েছে গুরুত্বও, অনেক কিছুর প্রতি মুগ্ধতা কমে গেছে, পাতলা রনি মোটু রনি হয়েছে, অস্থিতিশীল চঞ্চল মনে স্থিরতা এসেছে, ব্লগের প্রতি এডিকশান কমে গেছে, অনেক শখ পূরন হয়ে গেছে, অনেক টার্গেট পরিবর্তন হয়ে গেছে, আব্বু-আম্মুর ভয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে অফিস আর স্যারদের ভয়, গ্রামের ছোট খেলার দলটাও ভেংগে গেছে তবুও মনে হয় একটা জিনিস অপরিবর্তিত আছে- ব্লানক ফিলিংস!

কেমন অদ্ভূত যেন একটা কষ্ট, একটা করুন সুর মনে এখনও থেকে গেছে। হতে পারে এটা সব পেয়ে যাওয়ায় কষ্টের বিলাসিতা যেটাকে অনেকে দুঃখবিলাস বলে! আমার কাছে অবশ্য এটা ব্ল্যানক ফিলিংসই কিংবা শুন্যতা!

মনে করুণ সুর

মাঝে মাঝে খুব একা থাকতে ইচ্ছা করে, মন চায় কিছু সময় শুধু আমার জন্যই থাকুক। একা একা বসে থাকি, চারদিকে থাকুক শুনশান নীরবতা। আমি চুপচাপ বসে থাকব, আনমনে এটা ওটা ভাবব। আমার অতীত, আমার প্রত্যাশা, আমার প্রাপ্তি, আমার দুঃখ, মনের করুন সুর……

আমার অসহায়ত্ব, আমার বাধ্যবাধকতা, বিদ্রোহ করতে চেয়েও বাধ্য হয়ে মেনে নেওয়া মন, মনের সংখ্য ক্ষোভ কিংবা অপ্রাপ্তি আর বঞ্চনা নিয়ে ভাবব… এটা কি তাহলে দুঃখবিলাস হবে? হবে হয়তো। কোন কিছু  বেশি পরিমানে থাকা আর অকারণে তা ব্যয় করার নামই তো বিলাসিতা। দায়িত্ববোধে বাধ্য হওয়া, পালাতে চেয়েও পালাতে না পারা কিংবা বঞ্চনার অনুভূতি নিয়ে নীরবে ভেবে সময় নষ্ট করা হয়তো দুঃখবিলাসই!

পরাধীন মানুষ স্বাধীনতার জন্য ছটফট করে। কেউ টাকার অভাবে পরাধীন, কেউ ক্ষমতার অভাবে, কেউবা সময়ের অভাবে! হ্যা সময়ের অভাবেও মানুষ পরাধীন হয়, সময় বেচে দিয়ে কৃতদাসও হয়।

মাঝে মাঝে  প্রশ্ন জাগে আমি কি স্বাধীন মানুষ? আমিও কি সময় বেচে দেওয়া কৃতদাস নই। সারাদিন যে কাজগুলো করি অভাব না থাকলে কিংবা স্বাধীনতা থাকলে তার কত পার্সেন্ট স্বেচ্ছায় করতাম? ভাবতে যেয়ে অবাক হই। উত্তর আসে ২-৫% এর কাছাকাছি। তার মানে আমি আসলে স্বাধীন নই, পরাধীনই সময় বেচে দেওয়া এক ক্রীতদাসই…

পরাধীন মানুষের  কি কল্পনায় নিজের মত করে থাকার ক্ষমতা থাকে? ভেবে মনে হয়, কল্পনাশক্তিও মনে হয় পরাধীন হয়ে গেছে, নিজের মত করে ভাবার শক্তিও নাই। পরাধীন মন তাই মুক্তি দূরে থাক স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়।

এসব নিয়ে ভাবার যে সময় পেয়েছি এতেই তো অনেক খুশি খুশি লাগে। শেষ কবে এভাবে ভাবার মত সময়টুকুও পেয়েছি সেটা খুজতেই কয়েক ডজন ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানো লাগে।

মাঝে মাঝে মনে হয় এই পরাধীনতা আর ব্যস্ততার মাঝেই সুখ… দুঃখগুলোকে এক সুতোয় গাঁথা যায়। সেই সুতোয় সুর তোলা যায়, আমার অতীত, আমার কল্পনা, আমার একাকীত্ব, আমার অসহায়ত্ব, আমার পরাধীনতা, আমার মনের করুণ সুর…

Casual Leave

কাল সকালে অফিস আছে, উঠতে হবে ভোরে
ঘুমাতে এখন মন চায়না ভাল লাগার ঘোরে
খুব দ্রুত হায় সময় যে যায়, পাইনা অবসর
মন তো বলে থমকে সময় থাকুক নিরন্তর।

মাঝ রাতের এই বৃষ্টিটাকে খুব যে ভাল লাগে
এই বৈশাখে, এভাবেই যদি শ্রাবনী পাশে জাগে
সন্ধ্যা বেলার খুনসুটি আর, রাতের কপট রাগে
সময়টা হায় বেজায় দৌড়ায়; থাকতো যদি বাগে!

খুব সকালে উঠতে হবে, অফিস দিতে দৌড়
মাঝ রাতটাই থাকতো যদি, না হতো আজ ভোর!
আকাশ-কুসুম, কল্পনার ধুম; চাকুরী ব্যাটাই চোর
চাকর আমি; কামলাগিরিই ক্ষমতার আমার দৌড়।

এক নোটিশেই দাওনা বলে কালকে অফিস ছুটি
নাওনা তুলে নিয়ম কানুন, আমরা বাঁধি জুটি।
কামলারাও আজ স্বপ্ন দেখুক , দাওনা ছেড়ে টুঁটি
এই পৃথিবীর সৌন্দর্যটার আমরাও কিছু লুটি।

তোমরা তো ভাই বড় বড় লোক, আমাদের কথাও ভেব
কালকে কি ভাই দেবে ছুটি? পাওনা থেকেই নেব?
casual leave অধিকার নয়, চাইলেই কি আর পাব?
থাক! ছুটির আর নেই দরকার; সকালেই অফিস যাব।

আমার বিয়ে

আইইউটিতে যখন ফোর্থ ইয়ারে পড়ি (২০১০ এর শেষদিকে) তখনই সাহস করে বাসায় বলে ফেললাম “আব্বা,বিয়ে করব”।

আমাদের দেশে ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চাওয়াটাকে এক ধরণের অপরাধ হিসেবেই ধরা হয়। আমার বাসায়ও ভয় পেয়ে গেল। আমাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললো, “কোনমতে জাস্ট পাসটা কর, তারপরই বিয়ে দিয়ে দিব; চাকুরিও পাবার দরকার নাই। এখন বিয়ে করলে মানুষ কি বলবে? মান-সম্মান থাকবে?”

আমিও বুঝলাম। পাস করে বের হবার পর বেকার ছিলাম প্রায় ৯ মাস। তখন তো বিয়ের কথা মুখে আনা প্রায় অসম্ভবই। এরপর মোটামাটি আয়-রোজগারের একটা ব্যবস্থা হলো (মাসে ১৮ হাজার টাকার মত)। এর কিছুদিন পর বাসায় আবার বললাম বিয়ে করার কথা। আব্বা বললেন – এই টাকায় ফ্যামিলি চালাতে পারবি? ঢাকা শহরে তো বাড়িভাড়াই হবেনা এই টাকায়। আমি কিন্তু ১ টাকাও দিতে পারব না। You have to be at your own! ভেবে দেখ।

সাত-পাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসলাম। ঠিকই তো! এই টাকায় চলব কিভাবে? এভাবে আরও কিছুদিন গেল। আবার বললাম। আবার একই উত্তর। আবার পিছালাম। এভাবেই চললো কিছুদিন।

শেষমেস ঠিক করলাম। দরকার হলে রিস্কই নিব। আমার পরিচিত অনেকে তো মাসে ৮ হাজার টাকা স্যালারি পেয়েও ২-৩ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুন্দর সংসার চালাচ্ছে, তাঁরা পারলে আমি পারবনা কেন? লাইফ-স্ট্যান্ডার্ড নিচে নামিয়ে আনতে হবে? আনব। দরকার হলে বস্তিতে থাকব।

এরপর বিয়েটা করেই ফেললাম (জুন, ২০১৩)। আমার ২ ফ্রেন্ডের কাছে ২০ হাজার ও ৩০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা ধার করলাম। হবু বউকে আগেই জানিয়ে দিলাম আমি গরিব মানুষ। পুঁজি বলতে আমার এই ৫০ হাজার টাকাই। এর বেশি মোহরানা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আর পুরোটাই নগদ দিতে চাই। সে রাজি হলো।

কিভাবে জানি আরও ১০ হাজার টাকা ম্যানেজ হলো। বিয়ের দিন কি কি সব খরচে দেখি ২ হাজার টাকা শর্ট! দৌড়ায়ে গেলাম ছোট ভাইয়ের কাছে। বিভিন্ন সময়ে সে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া ১০০, ২০০ টাকা মিলিয়ে যে ২-৩ হাজার টাকা জমিয়েছিল তা থেকে ২ হাজার টাকা ধার দিল।বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের পরদিন বউয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে পাওনাদারদের ধার শোধ করলাম ধীরে ধীরে। বিয়ের আগেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে রেখেছিলাম । ভাড়া ৭ হাজার টাকা প্রতি মাসে। বিয়ের ৩-৪ দিন পরই ঢাকায় চলে আসলাম নতুন বাসায়। ফার্নিচার বলতে মেসে থাকার জন্য কেনা ১ হাজার টাকা দামের একটা চৌকি আর ৫০০ টাকা দামের একটা টেবিল আর মেসে মিশুকের ফেলে রেখে যাওয়া একটা প্লাস্টিকের চেয়ার।

সংসার চালানোর জন্য যত খরচ হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম বাস্তবে খরচ তার তুলনায় কমই। খরচ বেড়েছে বলতে বাসা ভাড়া ৪ হাজার টাকা (আগে ৩ হাজার লাগত আর তখন ৭ হাজার), খাওয়ার খরচ প্রায় অপরিবর্তিতই আছে (আগে ১০০০ টাকা বুয়া বিল লাগতো সেটা কমে গেছে)। তবে আগে যেমন হাতখুলে খরচ করতাম, তখন সেটা মোটামুটি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হলো। পার্থক্য এটুকুই। সেই খরচেই সুন্দর চলে যেতে লাগলো।

কয়েকমাস পর বউ বললো একটা ফ্রিজ কেনা দরকার। টাকা জমাতে হবে। কয়েকমাস টাকা জমিয়ে ২০ হাজার টাকার মত হলো। ফ্রিজের দোকানে গেলাম। বউ পছন্দ করলো প্রায় ৩০ হাজার টাকা দামের একটা ফ্রিজ। আমি আনইজি ফিল করা শুরু করলাম। আমার কাছে তো এত টাকা নাই। সব মিলিয়ে বাইশ হাজার টাকা হতে পারে। বউ দেখি হাঁসে। এই কয়দিনে বউও প্রায় ৮ হাজার টাকার মতো জমিয়ে ফেলেছে সংসারের খরচ সেভ করে।

এখনো মাঝে মাঝে অবাক লাগে। আগে টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারিনি আমি। বিয়ের আগে প্রায় এক-দেড় বছর যে আয় ছিল, বিয়ের প্রায় বছরখানেক পর পর্যন্তও আয় ছিল একই। বিয়ের আগের প্রায় এক বছরে সেভিংস ছিল শূন্য টাকা। বিয়ের পরের এক বছরেও সেভিংস শূন্য, কিন্তু ২ জনের একটা সংসার চালিয়েও ফ্রিজসহ আরও অনেক কিছু কেনা হয়ে গেছে!

বিয়ে করলে আসলেই আয়ে বরকত আসে। রিজিকের মালিক আল্লাহ- এটা নতুন করে অনুভব করেছিলাম তখন। যারা বিয়ে করবেন মনস্থির করেছেন, পাত্রীও ঠিক করা আছে কিন্তু টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারছেন না, সাহস করে বিয়েটা করেই ফেলুন। ইনশাল্লাহ, আয়ে বরকত আসবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহই। অপচয় না করলে আর অলস না হলে তো অভাব হবার কথা না।

ফুটনোটঃ বিয়ের জন্য যে দুই ফ্রেন্ডের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম, ধার শোধ করে তাঁদের বিয়ের সময়ও সেই একই পরিমান টাকা ধার দিতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। মাঝে মাঝে এই ৫০ হাজার টাকাকে খুব বরকতময় মনে হয়! কি সুন্দর এই হাত থেকে ঐ হাতে যাবার অছিলায় ৩ জনের বিয়ে সুন্দরভাবে হয়ে গেল!

* এর মানে কিন্তু এই না যে হুটহাট বিয়ে করে ফেলা উচিত। বিয়ে করার আগে অবশ্যই বউয়ের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নিতে পারতে হবে (গোশত ভাত খাওয়াতে না পারলেও অন্তত নুনভাত খাওয়াতে পারতে হবে)। বাবা-মা এর জন্য যেন বোঝা না হয়ে যান সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

** পরিবার/অভিভাবকের অনুমতি/সম্মতি ছাড়া বিয়ে করা উচিত নয়। দরকার হলে হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে হলেও পরিবারকে রাজি করিয়ে তারপরই বিয়ে করবেন। আমাদের অভিভাবকরা তো আর পাথর নন, লেগে থাকলে উনারা রাজি একসময় হবেনই। নিয়মিত ঘষতে থাকলে পাথরও ক্ষয় হয়ে যায়, আর এটা তো মানুষের মন!

গল্পে গল্পে বাংলা উপসর্গ মনে রাখার সহজ উপায়

প্রথমেই একটা গল্প শুনিঃ পাতি নামের মেয়েটি অজ, মূর্খ, অঘারাম। সাহা নামের ছেলেটি অনার্স পাশ। এদের আকদ (বিয়ে) হবে এটা এটা কুউন কথা! ইতি নামের মেয়েটি সাহাকে পছন্দ করে। সে তার বন্ধুদের নির্দেশ দিল পাতিকে আড়ে আন। তার বন্ধুরা পাতিকে নিয়ে আসার পর ইতিকে বললো, “আব (এখন) বস্তায় ভর।”

এবার এই গল্পটাকে সংক্ষিপ্ত করে এভাবে লেখা যায়ঃ
পাতি অজ, অঘারাম। সাহা অনাস। কুউন আকদ! আড়ে আন। আব ভর ইতি।

খাটি বাংলা উপসর্গঃ পাতি, অজ, অঘা, রাম, সা, হা, অনা, স, কু, উন, আ, কদ, আড়, আন, আব, ভর, ইতি, আ,সু,নি,বি =২১ টি

আ,সু,নি,বি খাটি বাংলা এবং তৎসম দুই ধরণের উপসর্গেই আছে। তাই এরা কমন। বাকী যা থাকে সেগুলো সবই (বিদেশী ছাড়া) তৎসম উপসর্গ (২০টি)। কাজেই এই সংক্ষিপ্ত গল্পটা মনে রাখতে পারলেই উপসর্গের খেল খতম ইনশাল্লাহ।

তৎসম উপসর্গঃ প্র, পরা, অপ, সম, নি, অনু, অব, নির, দূর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অতি, অপি, অভি, উপ, আ = ২০ টি।