ইলেক্ট্রনিক্সে হাতেখড়িঃ পর্ব-১

লিখেছেন মিশুক, ১৭ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:০০

শেয়ার করুন: Facebook

ইলেক্ট্রনিক্স শুধু EEE স্টুডেন্টদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে, এমন ধারণা এখন অচল। EEE’র গন্ডী পেরিয়ে এখন অন্য সেক্টরেরও অনেকের মধ্যেই ইলেক্ট্রনিক্সে আগ্রহ দেখা যায়।
টেকটিউনসেও নতুন ও মজার মজার সার্কিট ডায়াগ্রাম নিয়ে অনেকেই টিউন করে থাকেন। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক্সে সামান্য কিছু বেসিক কনসেপ্টের অভাবে সেগুলো অনেক সময়ই বোধগম্য হ্য় না- এমন অভিযোগ অনেকেরই।
“EEE স্টুডেন্টরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যবিষয় হিসেবে ইলেক্ট্রনিক্স শিখছেন, কিন্তু যারা অন্য সেক্টরে আছেন অথচ ইলেক্ট্রনিক্স শেখার ব্যাপারে অনেক আগ্রহ তাদের কী হবে?”-এমন কমপ্লেক্সে অনেকেই ভোগেন।
এর প্রেক্ষিতে ইলেক্ট্রনিক্স’কে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করতে টিউটোরিয়াল লিখতে আগ্রহী হই। চেষ্টা করব ইলেক্ট্রনিক্সের তাত্ত্বিক দিকটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে(যতদূর করা যায় আর কী!) এর এপ্লিকেশন অথবা প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে যেন পাঠক আগ্রহ হারিয়ে না ফেলেন।
আশা করি অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি’কে বড় করে দেখবেন না।

ছোটবেলায় নতুন ক্লাশে উঠার প্রধান আকর্ষণ ছিল নতুন বই। নতুন বই হাতে পাওয়া মাত্র গোটা বই রিডিং পড়ে ফেলতাম। সেজন্যই ইলেক্ট্রনিক্সের হাতেখড়ি পর্ব-১ এ যেকোন সার্কিট তৈরি করতে দরকারি টুলসগুলোর লিস্ট দিচ্ছি। সেইসাথে কোনটি কোন কাজে ব্যবহার করবেন ও আনুমানিক দামও দেওয়া হল। উদ্দেশ্য, আপনাদের মাঝে ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি।

সার্কিট কন্সট্র্যাক্ট করতে দরকারি টুলগুলো-

যে টুলগুলো ছাড়া একেবারেই চলবে নাঃ

১। সোল্ডারিং আয়রন বা তাঁতালঃ
উদ্দেশ্যঃ বোর্ডের ওপরে বিভিন্ন পার্টস ঝালাই করা।
ক্যাটাগরিঃ ২৫-৩০ ওয়াট।
দামঃ ১২০-২০০ টাকা (কোয়ালিটি অনুযায়ী)
**দোকানে ২৫-৩০ ওয়াটের সোল্ডারিং আয়রন চাইলেই হবে।

২। সোল্ডারিং ওয়্যার বা রাঙ্গঃ
উদ্দেশ্যঃ সোল্ডারিং আয়রনের সংস্পর্শে এসে রাং গলে গিয়ে
পার্টস ও বোর্ডের মাঝে কন্ট্যাক্ট তৈরি করে।
ক্যাটাগরিঃ ২৫০ গ্রাম
দামঃ ১৫০-৩২০ টাকা (কোয়ালিটি অনুযায়ী)
**একজন হবিষ্ট ২৫০ গ্রাম রাং দিয়ে প্রায় ২-৩ বছর চালিয়ে নিতে পারবেন। তাই অল্প পরিমাণে রাং কেনা বোধহ্য় শ্রেয়।

৩।রজিনঃ
উদ্দেশ্যঃ সোল্ডারিং আয়রনের মাথা পরিষ্কার রাখা।এতে ঝালাইয়ের মান ভাল হবে।
দামঃ ১০-২০ টাকা।(কোয়ালিটি অনুযায়ী)

৪।সোল্ডারিং আয়রন স্ট্যান্ডঃ
উদ্দেশ্যঃ কাজ করার সময় উত্ত্বপ্ত সোল্ডারিং আয়রন রাখা।
ক্যাটাগরিঃ ছোট সাইজের হলে কাজ করে আরাম।
দামঃ ৫০-৬০ টাকা।(কোয়ালিটি অনুযায়ী)


৫।ডিসোল্ডারিং পাম্প বা সাকারঃ
উদ্দেশ্যঃ বোর্ড থেকে কোন পার্টস তুলে ফেলা।
দামঃ ৮০-১২০ টাকা।(কোয়ালিটি অনুযায়ী)


৬।ওয়্যার কাটারঃ
উদ্দেশ্যঃ ওয়্যার(তার) কেটে ফেলা।
ক্যাটাগরিঃ ছোট হলে কাজ করে আরাম।
দামঃ ১২০ টাকা।

৭।ব্রেড বোর্ডঃ
উদ্দেশ্যঃ যে কোন সার্কিট কন্সট্র্যাক্ট করে টেস্ট করা।
দামঃ ২২০-৩৩০ টাকা।(কোয়ালিটি অনুযায়ী)


৮।ভেরো বোর্ডঃ
উদ্দেশ্যঃ ছিদ্রযুক্ত এই বোর্ডে সার্কিট কন্সট্র্যাক্ট করা।
ক্যাটাগরিঃ ২০x২৫ টি ছিদ্র।
দামঃ ২০ টাকা।


পিসিবি তৈরিতে দরকারি টুলগুলোঃ
(**পিসিবি কী এবং কেন দরকার তা বিস্তারিত পরের কোন টিউনে থাকবে।)

১।পিসিবি অথবা সিসিবিঃ
উদ্দেশ্যঃ পার্মানেন্ট সার্কিট কন্সট্র্যাক্ট করা।
ক্যাটাগরিঃ (১২x১২)ইঞ্চি
দামঃ ১৪৪ টাকা
**দোকানদারকে বলে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন সাইজের পিসিবি কিনতে পারবেন।

২।ফেরিক ক্লোরাইডঃ
উদ্দেশ্যঃ পিসিবি ইচ করা।(বিস্তারিত পরে বলা হবে)
ক্যাটাগরিঃ ১০০ গ্রাম
দামঃ ৬০ টাকা।

অন্যান্য টুলঃ

মাল্টিমিটারঃ
উদ্দেশ্যঃ ভোল্টেজ, কারেণ্ট মাপা।
ক্যাটাগরিঃ ডিজিটাল।
দামঃ ৫৫০-৬০০ টাকা।

এই টুলগুলো আপনি স্টেডিয়াম মার্কেট, সুইমিং পুল মার্কেট অথবা পাটুয়াটুলি থেকে কিনতে পারবেন।পাটুয়াটুলি থেকে কিনলে ২০%’র মত দাম কম পড়বে।

পরবর্তী পোস্টগুলোতে সার্কিট তৈরিতে ব্যবহৃত কমন কম্পোনেন্টগুলো(রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ডায়োড, লেড, ইন্ডাক্টর প্রভৃতি) আলোচনা থাকবে।
সে পর্যন্ত মেতে উঠুন ইলেক্ট্রনিক্সের উন্মাদনায়।

পোস্টটির লেখক
মিশুক
সম্পর্কে কিছু কথাঃ

মিশুক গাজীপুরে অবস্থিত IUT, OIC এর তড়িৎকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র। অবসরে তিনি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ও মাইক্রোকন্ট্রোলার প্রোগ্রামিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন । এই মূহুর্তে তিনি কি করছেন জানতে চাইলে তাকে ফেইসবুকে অনুসরন করুন।

4 responses to “ইলেক্ট্রনিক্সে হাতেখড়িঃ পর্ব-১

  1. দারুন হয়েছে মিশুক ভাই ! কিন্তু দুঃখের কথা কী জানেন ? গত ৬ বছর যাবত আম্মাকে তাল দিচ্ছি কিনে দেবার জন্য , ঐটা আম্মা হাইসাই উড়াইড়া দিতেছেন …
    আমার হাতে টাকা সাধারনত আসে না , এইটাই সমস্যা 😦

  2. @জামাল উদ্দিন ভাই,
    ধন্যবাদ। সবগুলো টুল একেবারে না কিনে অল্প অল্প করে কেনার চেষ্টা করুন।
    দেখবেন এক সময় সবগুলো কেনা হয়ে গিয়েছে।:)

    আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

মন্তব্য করুন